শেষ বিকালের মেয়ে বই রিভিউ | Sesh Bikaler Meye Book Review

শেষ বিকালের মেয়ে বই - জহির রায়হান | Sesh Bikaler Meye Book Review


Review24  এ আপনাকে স্বাগত! বইয়ের রিভিউ পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন।

আপনার লেখা রিভিউ প্রকাশ করতে চাইলে মেসেজ করুন আমাদের Facebook Page এ 

বই তথ্যবালি :

বইয়ের নাম : শেষ বিকালের মেয়ে

লেখক : জহির রায়হান 

বইয়ের ধরণ : রোমান্টিক 


শেষ বিকালের মেয়ে বই রিভিউ :



বিভিন্ন বই পড়ার মাঝখানে

আজ পড়লাম 'শেষ বিকেলের মেয়ে'।

নাম দেখে মনে করেছিলাম, হয়তো কোন নারী চরিত্রের প্রেম কাহিনী বা এরকম কিছু।


কিন্তু না,আবেগ,ভালোবাসা আর রোমান্টিকতায় পূর্ণ এ প্রেমের উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কাসেদ নামে এক যুবক,পেশায় কেরানী।বাড়িতে বৃদ্ধ মা আর নাহার নামে দুঃসম্পর্কের এক বোন।নাহারের মা মারা যাওয়ার পর এ বাড়িতেই সে মানুষ হয়েছে।খুব এবং খুবই স্বল্পভাষী এই মেয়েটিই পুরো বাড়ি গুছিয়ে রাখে।

গল্পের নায়ক কাসেদ ভালোবাসে জাহানারা নামের একটি মেয়েকে।মেয়েটির বাবা পেশায় উকিল আর মেয়েটিও শিক্ষিত ও আধুনিক।জাহানারাও কাসেদ কে ভালোবাসে।কিন্তু কেউ আর তা প্রকাশ করতে পারেনা।


একদিন জাহানারার জন্মদিনে কাসেদের পরিচয় হয় শিউলির।শিউলি সম্পর্কের দিক দিয়ে জাহানারার কাজিন।খুবই আধুনিকমনা এই মেয়েটির সাথে একসময় কাসেদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।আর এর কৃতিত্ব বা দায় যায় বলিনা কেন তার সবটুকুই শিউলির।


এভাবেই চলতে থাকে ত্রিভূজ প্রেম কিংবা বন্ধুত্বের গল্প!

কিন্তু না,গল্পটা আর ত্রিভূজ থাকেনা!


তাদের মাঝে হাজির হয় সালমা,কাসেদের খালাতো বোন।ছোটবেলা থেকেই এই মেয়েটি মন-প্রাণ দিয়ে কাসেদ কে ভালোবাসতো।

কিন্তু ভালোবাসলেই তো আর সবসময় ঘর বাধা হয় না!তেমনি কাসেদের অবহেলায় সালমাও পারেনি তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে ঘর বাধতে।অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায় তার,জন্ম হয় এক কন্যা সন্তানের।

অনেকদিন পর শিউলি এসে তাকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে বলে!

কিন্তু এবারও প্রত্যাখান করলো কাসেদ,কারন তার মনে তো শুধু জাহানারার বসবাস!


এদিকে শিউলির কথাবার্তা আর আচরনে মনে হতে থাকে সে কাসেদের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।আর এ সম্পর্কের জেরে আর ভূল বুঝাবুঝির কারনে জাহানারার সাথে কাসেদের দূরত্বটা বেড়ে যায়।জাহানারা চলে যায় পর্দার অন্তরালে।

ভালোবাসার মানুষের কাছে নত হওয়ার চেয়ে অভিমানই জয়ী হয় তার কাছে।


সবসময় যাকে ভালোবেসে এসেছে তার দুয়ার থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে কাসেদ শিউলি কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে!

কিন্তু শিউলি জানিয়ে সে তাকে বন্ধু হিসেবেই দেখে এসেছে,আর সব পুরুষ একই রকম একথা বলে মৃদু অপমানও করে কাসেদ কে!

ঘরে ফিরে কাসেদ দেখে তার মা গুরুতর অসুস্থ,মৃত্যু শয্যায়।নাহারের বিয়ে ঠিক করেও তার বিয়ে দেখে যেতে পারলো না কাসেদের মা!

তার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।


এই মুহূূর্তটাই পুরো উপন্যাসের মধ্যে আমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে।কাসেদ কিংবা নাহারের জন্য এ কষ্ট নয়,কষ্টটা একজন মায়ের মৃত্যুতে।পৃথিবীতে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে কষ্টদায়ক জিনিস বলে মনে হয়।

পৃথিবীতে সব মায়েরা যদি হাজার বছর বেচে থাকতো!


কিছুদিন পর নাহারের বিয়ে দেওয়ার জন্য কাসেদের খালু এসে নাহারকে তাদের বাড়ি নিয়ে যায়।

কাসেদের পৃথিবীটা আজ শূন্য, বড্ড শূন্য!আজ তার ঘরেও কেউ নেই,বাইরেও কেউ নেই।


শেষ বিকেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে নানা কথা ভাবতে ভাবতে আর মেঘের খেলা দেখতে দেখতে হঠাৎ দরজায় কড়াঘাত।কে?

একটি মেয়ে এসেছে,শেষ বিকেলের মেয়ে!

যে এসেছে সারাজীবনের জন্য কাসেদের নিকট নিজেকে সমর্পন করার জন্য!

কে এই মেয়েটি?


জাহানারা? তবে কি সে তার ভূল বুঝতে পেরেছে?

শিউলি?সেও কি বন্ধুত্বের এক ফাকে কাসেদ কে ভালোবেসেছিল,সেদিন যা করেছে তা নিছকই মজা করার জন্য করেছে?

নাকি সালমা? স্বামীর ঘর ছেড়ে সুখের আশায় আবারও এসে কাসেদের দুয়ারে দাড়িয়েছে?

কে এসেছিল,তা আপনাদের বলব না!



উপসংহার :

অনুরোধ থাকবে,জহির রায়হানের এই অসাধারন উপন্যাসটি পড়ে নিজেই জেনে নিন,শেষ বিকেলের মেয়েটিকে!


রিভিউ লিখেছেন :

~ আবু তাহের

Post a Comment

Previous Post Next Post